গ্রাম-বাংলার কাব্য

গ্রাম-বাংলা (নভেম্বর ২০১১)

রফিকুজ্জামান রণি
  • ২৫
  • 0
  • ৬৪
ত্রিকন্যার জননী বাংলায় আরেকবার এসেছিলাম আমি হাজার বছর আগে
একটি বিভ্রান্ত প্রজাপতি হয়ে_
তখন পদ্মা-মেঘনা-যমুনা ওরা ত্রিসহোদর ছিলো খুবই ছোট; অবুঝ খুকির মতো
সারাক্ষণ মৃদু ঢেউয়ের কল্লোলে বাকযুদ্ধে লিপ্তছিলো পরস্পর
তর্কে হারলে ভেঙ্গে ফেলতো চোখের সামনে যা পেতো সব
করতো না দামি-সস্তার হিসাব।

তখন ভাবতেও পারিনি_ একসময় ওরা এতো বড় হয়ে
সুবিশাল ঢেউয়ের নৃত্যে ঘুরে বেড়াবে অনন্তকাল।

তারপর এসেছি, কোনো এক অগি্নঢালা গ্রীষ্মের বিষণ্নদুপুরে এক ক্লান্ত-পথিকের বেশে
কাঁচা রাস্তার পাশে দাঁড়ানো গাছটির তলে বসে
দেখেছি, কিশোরীর কানের দুলের মতো লটকায়
বাংলার থোকায় থোকায় রংবেরঙের ফল
তীক্ষ্নচঞ্চু ফেলে ফলের গায়ে খোঁচা দেয় দু'একটা কৌতূহলী পাখি

তখন ভাবতেও পারিনি_ এদৃশ্য চিরদিনের জন্যে নয়
একসময় এদেশে ফল-মূলের দাম হবে আকাশছোঁয়া

তারপর এসেছি, কোনো এক নবযৌবনা বর্ষায়
স্তম্ভ মেঘের হেলিকপ্টারে চড়ে আকাশভাঙ্গা বৃষ্টিরূপে
দেখেছি, খালে-বিলে টলটলে পানির শিবনৃত্য আর চালাক মাছের ফুটবল খেলা
শুনেছি, বৈয়াঘ্র ব্যাঙ বয়াতির পুথিপাঠ

তখন ভাবতেও পারিনি_ আকস্মৎ নিভে যাবে বাংলার মৎস্যৈতিহ্যের দীপ
এদেশের মানুষ ভোগবে তীব্র পানি সংকটে

তারপর এসেছি, এক মিষ্টি রোদেলা শরতের সকালে, পথভোলা ভ্রমর হয়ে
দেখেছি, রূপালি আলোর দিগন্ত; জঞ্জালমুক্ত আকাশ
মানুষের নিগূঢ় সমপ্রীতি; ভালোবাসার ছড়াছড়ি; নেই তিলসম দ্বেষের ঘনঘটা

তখন ভাবতেও পারিনি_ একসময় রক্তের সুইমিংপুলে সাঁতার কেটে
বিশ্বের বুকে কলঙ্কিত হবে এদেশে

তারপর এসেছি, নবান্নের গাড়ি চেপে এক স্বরূপিনী হেমন্তে
ঘাসের ঠোঁটে চঞ্চল শিশিরকণা হয়ে
দেখেছি, উদাস মাঠে বিচিত্র ফসলের জনসভা; গোয়ালে বহুজাত গাভীর আড্ডা
কৃষাণের ঘামঝরা কষ্টের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ_ হেসে ওঠে সোনালি ফসল

তখন ভাবতেও পারিনি_ একসময় অনাহারে মারা যাবে বাংলার অসংখ্য মানুষ
দ্রব্যমূল্যের বাজার হবে লাগামহীন ঘোড়ার মতো ধূর্ত

তারপর এসেছি, কোনো এক গাম্ভীর্যপূর্ণ শীতে
ডানায় কুশায়ার আঠামাখা অতিথি পাখিরূপে
দেখেছি, ঘরে ঘরে লোভ্য পিঠার আড়ৎ
মাথা নেড়ে শিশুদের পিঠা খানার ঢং
মাথান্যাড়া খেজুর গাছের নলে মুখ রেখে দুষ্টু ছেলের রস খানার বৈচিত্রময় দৃশ্য

তখন ভাবতেও পারিনি_ একসময় এদৃশ্য রূপকথায় পরিণত হবে
নিপা ভাইরাস কেড়ে নেবে মানুষের তাজাপ্রাণ

তারপর এসেছি, কোনো এক উৎসবমুখর বসন্তে
আম্রকুঞ্জের অন্তরালে কোলো কোতর্া পরা কোকিল বেশে
দেখেছি, বাংলার পুষ্পারণ্যে সুরভি ডানা মেলে ফুটে আছে রংবাহারি ফুল
পল্লবের সংস্পর্শে জীবন গড়ার স্বপ্নে মেতে ওঠে পশু-পাখির কাফেলা
গাছের মিনারে দাঁড়িয়ে কচিপাতা সূর্যকে দেয় রোমান্টিক চোখটিপি

তখন ভাবেতও পারিনি_ গ্রীন হাউজ এফেক্টের আগ্রাসনে একসময়
এ দেশ হারাবে পশু-পাখির উজ্জ্বল ঐতিহ্য

আজ আমি ষড়ঙ্গক বাংলার দিকে প্রশ্নাকুল চোখে তাকিয়ে আছি
আমার বহুল জন্মের দেশ আগের মতো নেই
হারিয়ে গেছে আমার ষড়ৈশ্বর্যের বাংলাদেশ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রোদের ছায়া আজ গল্প কবিতা শুরু করলাম এই কবিতা দিয়ে , অনেক ভালো লাগা রেখে গেলাম /
ম্যারিনা নাসরিন সীমা চমৎকার কবিতা ! পছন্দের তালিকায় নিলাম ।
আশিক বিন রহিম kabita র অপমার জন্য থাঙ্কস.
সূর্য কবিতার উপমায় নতুনত্ব আছে "মাছেদের ফুটবল খেলা" "স্তম্ভ মেঘের হেলিকপ্টারে চড়া" "রক্তের সুইমিং পুল"............... ভাল লিখেছ রণি। কবিতায় আমি চরিত্রটা কী তা বুঝা যায় না [সময় বলে ধরে নিলাম]
তানভীর আহমেদ হৃদয়কে শীতল করে দিলো আপনার কবিতাখানি রণি ভাই। এক স্বপ্নের আবেশে ছিলাম। শুভকামনা।
sakil অসাধারন । বেশ ভাল লেগেছে । চালিয়ে যান ভাই
নিরব নিশাচর সুন্দর কাব্য... বিজয়ী লেখকদের আরো সরব উপস্থিতি কামনা করি... পছন্দে তুলে রাখলাম...
মিজানুর রহমান রানা তারপর এসেছি, নবান্নের গাড়ি চেপে এক স্বরূপিনী হেমন্তে ঘাসের ঠোঁটে চঞ্চল শিশিরকণা হয়ে দেখেছি, উদাস মাঠে বিচিত্র ফসলের জনসভা; গোয়ালে বহুজাত গাভীর আড্ডা কৃষাণের ঘামঝরা কষ্টের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ_ হেসে ওঠে সোনালি ফসল---------ভালো লেগেছে।

০৩ মে - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪